Home » আজকের রাজনৈতিক পরিবেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্রের ব্যাকরণের মিল খোঁজার একটি প্রচেষ্টা?
কলকাতা জেলা দেশ

আজকের রাজনৈতিক পরিবেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্রের ব্যাকরণের মিল খোঁজার একটি প্রচেষ্টা?

নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য, হাকিকত নিউজ, পশ্চিমবঙ্গ:  গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় রাষ্ট্রনীতি নির্ধারণ করার দায়িত্ব সংসদের। সংসদ গঠিত হয় সংসদ সদস্য দিয়ে। সংসদে আসা সদস্যরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত। এটাই গণতন্ত্রের মূল ব্যাকরণ। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলি দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই তাদের কর্মপদ্ধতির সঙ্গে দেশের গণতন্ত্রের স্বাস্থ্য ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। আজকের রাজনৈতিক পরিবেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্রের ব্যাকরণের মিল একটি সোনার পাথর বাটিতে পরিণত হয়েছে কি ? একটা প্রশ্ন বারে বারে উঠে আসছে যে, আমরা কি  দ্রুত সঠিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ছি। রাজনীতিবিদরা  যথাযথ নেতৃত্ব দেয়ার বদলে বাণিজ্যিক সুবিধা নেয়ার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। সাহসী রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার যে উদার-উন্নত পরিবেশ সেটা দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ফলে গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ গুলো প্রচন্ড হোঁচট খাচ্ছে । বিষয়টি একটা স্বাধীন জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অশনি সংকেত। সুস্থ রাজনীতি চর্চার খোলা পথগুলো ধীরে ধীরে রুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে এবং সুস্থ শিক্ষিত মানসিকতার লোকজন রাজনীতির ওপর থেকে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। যারা সমাজকে সঠিক নেতৃত্ব এবং  দিকনির্দেশনা দিতে পারেন  তারা নানান উচ্ছৃঙ্খলতা ও অসম্মানজনক পরিস্থিতি দেখে পিছিয়ে যাচ্ছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সে স্থান দখল করছে অসাধু ও অপরিচ্ছন্ন লোকজন। ফলে রাজনীতির যে মূল্যবোধ ও মর্যাদা তা নষ্ট হয়ে পড়ছে। সকলে জানেন, সঙ্গীত-সাহিত্য-শিল্পকলা চর্চার জন্য অনুকূল পরিবেশ লাগে। মাছের বাজার আর চালের আড়তে বসে সাহিত্য-শিল্পকলা চর্চা হয় না। ঠিক তেমনি রাজনীতি চর্চার জন্যও পরিবেশ লাগে। আমরা সামরিক শাসনের নিন্দা করি। কারণ সামরিকতন্ত্রে জনগণের ভোটাধিকার, বাক-স্বাধীনতা, অনেক ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারও খর্ব হয়। কিন্তু ফ্যাসিবাদী শাসন ব্যবস্থা বা একনায়কতান্ত্রিক পরিবেশে কি গণতন্ত্রের বিকাশ হয়? মোটেই না। আজকের রাজনীতির মূল বৈশিষ্ট্য সমালোচনা ,ব্যাক্তিগত আক্রমণ এবং চটুলতায় ভরপুর। বরং সবকিছুর জন্য পরস্পরকে দোষারোপ করাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রধান বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের পাহাড়প্রমাণ সমস্যার মোকাবিলায় কোথাও সরকার এবং বিরোধী  পক্ষের মধ্যে সমঝোতা ও সহযোগিতার লেশমাত্র নমুনা দেখা যায় না। বর্তমানে  দিন আনে দিন খেটে খাওয়া মানুষগুলো চরম সংকটমুখী। অর্থনৈতিক ধস,কর্মসংস্থান দ্রুত নিম্নমুখী প্রায় তলানিতে ঠেকেছে । বাজারমূল্য আগুন ছোঁয়া, পেট্রল ও রান্নার গ্যাসের মূল্য আকাশ ছুঁই ছুঁই ,নাজেহাল অসহায় সাধারণ মানুষ। প্রতিবাদ, মিছিল- আমন্ত্রণ, নিমন্ত্রণ সব যেন ভাইরাস আক্রান্ত। বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলই গিমিক দিয়ে ক্ষমতা দখলের অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে একটা  ইতিবাচক পদ্ধতির ( positive approach) বড়োই অভাব।আর সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব  কম বেশি একই রোগে আক্রান্ত ঐতিহাসিকভাবে উঠে আসা ব্যক্তিত্ব কে নাকচ করা যার ফলে শুন্যস্থানে আসার জন্য অনৈতিহাসিক ব্যক্তিদের প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যাচ্ছে। একটা রাজনৈতিক দল যদি ব্যাপক মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে কেবল মাত্র টিকে থাকার ধান্দা করে সে দলের সাধারণ রণকৌশলগত লাইনের নীতিটাই হয়ে যায় মনভোলানো চটক নির্ভর। স্রেফ নেতিবাচক প্রচার আর নাকচের উপরে দাঁড়িয়ে তারা বাঁচতে চায়। সেটা কোনোদিনও সিমেন্টিং ফ্যাক্টর হতে পারে না। নাকচ, বয়কট,বা স্রেফ  ঘৃণা দিয়ে কোনো মহৎ কাজ হয় না। ভালোবাসার দৃঢ় ভিতের উপর যদি ঘৃণার জন্ম না হয়, সে ঘৃণা বিদ্বেষ এবং ঈর্ষাতে পরিণত হয়ে নিজেদেরই ধ্বংস ডেকে আনে। প্রতিষ্ঠা করার জন্য ইতিবাচক বস্তু ছাড়া নাকচ শূন্য। সব রাজনৈতিক দলেরই ভালো মন্দ আছে, কার ভালোর পাল্লা ভারী আর কার মন্দের পাল্লা ভারী সে বিচার করতে বসলে একটা বিরাট সমাজকে ধরে মুল্যায়ন করতে হয়, সে মুল্যায়নের প্রতিবিম্ব ব্যক্তি বা সমাজের কোনও উপকারে আসবে বলে মনে হয়  না? যুক্তি শুরু হয় ব্যক্তি বা একজন রাজনীতিবিদ কোন রাজনৈতিক মতবাদ এবং অবস্থানের উপরে দাঁড়িয়ে আছেন তার উপর। ধরুন পোখরানে পরমানু পরীক্ষায় আমরা শক্তিশালী হয়েছি- আপনি এ নিয়ে লিখে দেখুন, এর বিপরীত দৃষ্টিকোণ এক হাজার  রকম যুক্তি এনে দেখানো যায় এর খারাপ দিক।  জরুরি অবস্থা নিন্দনীয়- এর বিপ্রতীপে যুক্তি তথ্য এনে দেখানো যাবে সেটা খারাপ ছিল না, সবুজ বিল্পবের সুফল বাংলা পায়নি- আপনি দাবি করে দেখুন এটা সঠিক বিচার বলে ঐকমত্যে আসতে পারেন কিনা ? পশ্চিম বঙ্গে এতো কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে কোন রাজনৈতিক দলের কিছু করার নেই- এটা কি হলফ করে বলতে পারবেন? যাক ফিরে আসি মূল বিষয় যেটা দিয়ে শুরু করেছিলাম আজকের রাজনৈতিক পরিবেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে গণতন্ত্রের ব্যাকরণের মিল খোঁজার  প্রচেষ্টা, কিন্তু এই প্রচেষ্টা খোঁজা বোধহয়  ছায়ার সঙ্গে লড়াই করা। একটা কথা আছে না যে ইতিহাসের পুনাবৃত্তি হয়, হয়তো বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে তাই হচ্ছে।  এথেন্স একাডেমির বারান্দায় দাঁড়িয়ে সোচ্চার কন্ঠে  বলেছিলেন  প্লেটো, “রাজনীতিতে অংশগ্রহণে অনীহার অন্যতম শাস্তি হলো নিজের চেয়ে নিকৃষ্টদের দ্বারা শাসিত হওয়া!” মিথ্যে নয়! মিথ্যে নয় কথাগুলো।

সংবিধিবদ্ধ ঘোষণা :একটি নিরপেক্ষ নিউজ পোর্টাল হিসেবে  উপলব্ধ তথ্য ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই সংবাদে বক্তব্য ও মন্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কোনো রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব করা নয় বা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর আমাদের  মতামত চাপিয়ে দেওয়া। (হকীকত নিউজ www.haqiquatnews.com) একটি নিউজ পোর্টাল যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।

About the author

Nanda Dulal Bhatttacharyya

Nanda Dulal Bhatttacharyya

journalist by profession , have put good number of years in ground reporting

Add Comment

Click here to post a comment