নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য, হাকিকত নিউজ ,উত্তর 24 পরগনা : গণতন্ত্রে শুধু সংখ্যা এবং রাজনীতিক বিন্যাস আর সমাবেশ (permutation & combination) এর ভিত্তিতে নির্বাচন হয় না ,গ্রাউন্ড রিয়ালিটি, রসায়ন, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বস্তু হচ্ছে সাধারণ মানুষের উপলব্ধি (perception)। দমদম লোকসভার অধীনে সাতটি বিধানসভার (খড়দহ, দম -দম উত্তর, পানিহাটি, কামারহাটি, বরানগর, দম-দম এবং রাজারহাট গোপালপুর) সাধারণ মানুষের সাথে আসন্ন দম-দম লোকসভা নির্বাচন নিয়ে আমাদের আলাপ আলোচনার মধ্যে দিয়ে বেশ কিছু তথ্য সামনে এসেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ বিভিন্ন জ্বলন্ত ইস্যুতে তাদের আকাঙ্খা, প্রত্যাশা, নিরাশা নিয়ে মতামত রেখেছেন। আমরা গ্রাউন্ড লেভেল থেকে সাধারণ ভোটারদের উপলব্ধি বর্ণনা করার চেষ্টা করছি, যারা আসন্ন দম-দম লোকসভা নির্বাচনে নির্ধারক ফ্যাক্টর হতে চলেছেন । যদি আমরা সাধারণ মানুষের সাথে আমাদের যোগাযোগের গড় ফলাফলের দিকে তাকাই, মতামত গুলো খুব চূড়ান্ত ছিল না তবে তাদের বেশিরভাগই একমত যে এটি মূলতঃ তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে একটি নিষ্পত্তিমূলক রাজনৈতিক লড়াই । ১৯৭৭ (1977) সাল থেকে উত্তর ২৪ (24) পরগনা জেলার দম-দম লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ধরণ পরিবর্তন করার ইতিহাস রয়েছে। আসন্ন ২০২৪ এর নির্বাচনে দম-দম লোকসভা কেন্দ্রে তিনজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ প্রতিযোগিতায় রয়েছেন । দম-দম থেকে ২০০৯ (2009) সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের তিনবারের সাংসদ, সৌগত রায়, সিপিআই(এম) এর ডাঃ সুজন চক্রবর্তী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত। বর্তমান রাজনৈতিক গতিশীলতা বুঝতে হলে একটু অতীতে ফিরে তাকাতে হবে ২০১৯ (2019) সালে দম-দম লোকসভার নির্বাচক রা কি জনাদেশ দিয়েছিলেন –
সৌগত রায় ( তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী) – ( ৪২.৫১%) ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
সমীক ভট্টাচার্য ( ভারতীয় জনতা পার্টি )- ( ৩৮.১১%) ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন।
নেপাল দেব ভট্টাচার্য ( সিপিআই(এম) )- ( ১৩.৯১ %) ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলেন।
সৌরভ সাহা ( ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ) ( ২.৪২ %) ভোট পেয়ে ছিলেন।
এইবার আসা যাক আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে। দম-দম লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধান সভা ( খড়দহ, দম-দম উত্তর, পানিহাটি, কামারহাটি ,বরানগর, দম-দম, রাজারহাট গোপালপুর ) এই সাতটি বিধানসভায় ২০২১ এর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ৪৯ % (49%) ভোট পেয়ে সবকটি আসনে বিজয়ী হয়েছিল। ভারতীয় জনতা পার্টি ৩২.৫% ( 32.5% ) ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থান দখল করে। সিপিআই(এম) ১২.৬% (12.6%) পেয়ে তৃতীয় স্থানে ছিলো এবং ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস ৩.৩% (3.3%) ভোট পেয়েছিলো। বিগত লোকসভা এবং বিধান সভার নির্বাচনী ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর থেকে অনেক খানি এগিয়ে অবশ্য ভারতীয় জনতা পার্টি লোকসভা এবং বিধান সভা দুটি নির্বাচনেই তৃণমূল কংগ্রেস কে ভোট শতাংশ এর নিরিখে একটি ভালো রাজনীতিক চ্যালেঞ্জ দিতে সক্ষম হয়ে ছিলো ।
আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের রাজনৈতিক গতিশীলতা
পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন লোকসভা নির্বাচন আসলেই একটি হাই স্টেক( high stake) রাজনৈতিক লড়াই। এই বারের লোকসভা নির্বাচন ইন্ডিয়া জোট গঠনের পরে একটি অন্য খাতে বইছে মূলতঃ রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভারতীয় জনতা পার্টির এবং নরেন্দ্র মোদী বনাম ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে আর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচুর ক্ষমতাবিরোধী ( anti-incumbency) কারণ থাকা সত্ত্বেও, মমতা ফ্যাক্টর এখনও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য একটি বড় সুবিধা।
যে কারণগুলি এই লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে
দম-দম, লোকসভায় প্রায় ১৫(15) লক্ষেরও বেশি ভোটার, মূলত একটি মধ্যবিত্ত-অধ্যুষিত নির্বাচনী এলাকা । মমতা সরকারের দেওয়া সমস্ত সুবিধাভোগী প্রকল্পগুলির মধ্যে, সবচেয়ে কার্যকর হল লক্ষ্মীর ভান্ডার, যা মহিলা জনসংখ্যার একটি বড় অংশকে দেওয়া হয়েছে। দম-দম লোকসভার পনের লাখ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৪৯ % (49%) মহিলা ভোটার যারা এই আসন্ন নির্বাচনে একটি নির্ণায়ক ফ্যাক্টর হতে চলেছেন। অবশই এই ক্ষেত্রে প্রাধান্য পেতে চলেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
উপসংহার : পশ্চিমবঙ্গে প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল নির্বাচনী মাঠে নেমেছে। তাদের প্রত্যেকেই একটি স্বতন্ত্র উদ্দেশ্যের জন্য লড়াই করছে। কংগ্রেস এবং বামেরা একসাথে তাদের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে। ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস জনগণের পূর্ন আস্থা ফিরে পেতে লড়াই করছে। অন্যদিকে বিজেপি তার ধার আরও মজবুত করতে লড়াই করছে। এই নির্বাচন শুধু আকর্ষণীয়ই নয়, সত্যিকারের ঐতিহাসিকও হয়ে উঠেছে। তৃণমূল কংগ্রেসের ক্রমাগত রাজনৈতিক মাইলেজের (mileage) কারণ হলো গ্রামীণ উন্নয়ন, সামাজিক প্রকৌশল, সামাজিক খাতে ব্যয় এবং একটি বিভ্রান্ত বাম-কংগ্রেস জোট। আমরা দুর্নীতিকে সমর্থন করছি না তবে শুধু দুর্নীতিকে প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা (agenda) হিসেবে রেখে এই লোকসভা নির্বাচনের বৈতারিনী পার করা যাবে না। আজকে রাজনীতিক পরিবেশে কেও ধোয়া তুলসী পাতা নন। আমরা গ্রাউন্ড রিয়ালিটি অস্বীকার করতে পারি না। মমতা সরকার বেশ কিছু পরিকাঠামো এবং সরকারি কর্মসূচিতে কিছু অর্থপূর্ণ উন্নতি করেছে। জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। বিপুল সংখ্যক গ্রামীণ মানুষ এর থেকে উপকৃত হয়েছে । এক গুচ্ছ সরকারি সুবিধাভোগী প্রকল্প সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশেষ করে শহর ও গ্রামীণ এলাকায় ভালো প্রভাব ফেলেছে। বামফ্রন্ট ২০১১ (2011) সালের নির্বাচনে হেরেছিল, কিন্তু ২০১৬ (2016) সালের নির্বাচনে তারা তাদের আদর্শ কে হারিয়েছিল। তারা গ্রাউন্ড লেভেলে সাধারণ মানুষের নাড়ি এবং মেজাজ পরিমাপ করতে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছিলেন। একটি মিথ তৈরি করা হয়েছিল যে কংগ্রেসের সাথে জোট বাঁধার জন্য এটি জনগণের দাবি ছিল কিন্তু এটি আসলে জনগণের দাবি ছিল না? বাংলায় গৃহীত নির্বাচনী ও আদর্শিক লাইনের দ্বন্দ্ব হয়তো এই লোকসভা নির্বাচনেও বিরূপ প্রভাব ফেলবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে বাম-কংগ্রেস জোট রয়েছে কারণ উভয় দলই তাদের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে। এই জোটটি সাধারণ ভোটারদের মধ্যে একটি বিশাল বিভ্রান্তি তৈরি করেছে তাই শেষ পর্যন্ত এই দম -দম লোকসভা নির্বাচনে রাজনীতিক লড়াই টা মূলতঃ তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা ব্যানার্জী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির নরেন্দ্র মোদীর মধ্যে।
সংবিধিবদ্ধ ঘোষণা :একটি নিরপেক্ষ নিউজ পোর্টাল হিসেবে উপলব্ধ তথ্য ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই সংবাদে বক্তব্য ও মন্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কোনো রাজনৈতিক দল / সংগঠন / ব্যক্তি বিশেষের উপরে অপ্রয়োজনীয় বা ইচ্ছাকৃত মন্তব্য করা নয়। বা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর আমাদের মতামত চাপিয়ে দেওয়া । (হকীকত নিউজ www.haqiquatnews.com) একটি নিউজ পোর্টাল যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।
Add Comment