Home » দমদম লোকসভার নির্বাচকরা কি এবার পালাবদলের পক্ষে না কি আবার সৌগত রায় কে পুনঃ নির্বাচিত করবেন?
উত্তর চব্বিশ পরগণা দেশ

দমদম লোকসভার নির্বাচকরা কি এবার পালাবদলের পক্ষে না কি আবার সৌগত রায় কে পুনঃ নির্বাচিত করবেন?

নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য, হাকিকত নিউজ, উত্তর ২৪ পরগনা : গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল বা দলের কর্মীরা কী ভাবছেন তা একেবারেই গুরুত্বহীন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সাধারণ মানুষের উপলব্ধি। নির্বাচনী ফলাফল অনেকগুলি রসায়নের  উপর নির্ভর করে- প্রচারের কার্যকারিতা, বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান, রাজনৈতিক দল এবং প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা সর্বোপরি নির্বাচক মণ্ডলীর উপলব্ধি ( perception)।  উত্তর ২৪ পরগনা জেলার দমদম লোকসভা কেন্দ্র, যা ১৯৭৭(1977) সাল থেকে পরপর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার ধরণ পরিবর্তন করার একটা ইতিহাস রয়েছে। এই বার কি সেই পরিবর্তনের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করে  পালাবদল হবে ?? না কি আবার তৃণমূল কংগ্রেসের তিন বারের সাংসদ, সৌগত রায় পুনঃ নির্বাচিত হবেন ?? এই নির্বাচনে তিনজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ একে অপরের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আসন্ন দমদম লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দমদম থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের তিন বারের সাংসদ, সৌগত রায়, সিপিআই (এম) দলের প্রবীণ এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ডাঃ সুজন চক্রবর্তী, ভারতীয় জনতা পার্টির  শীলভদ্র দত্ত। । পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট এই মুহূর্তে রাজ্যের মানুষের সামনে কোটি টাকার প্রশ্ন  হলো বামপন্থীরা না কি ভারতীয় জনতা পার্টি কোনটা বেশি  প্রাসঙ্গিক ?

                           রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা বেশ কিছু ট্রিগারিং(triggering) ফ্যাক্টর এর উপরে নির্ভর করে

এই ট্রিগারিং ( triggering) ফ্যাক্টর গুলো ভোট বাক্সে প্রতিফলন করে এবং একটি রাজনীতিক দল কে প্রাসঙ্গিক বা অপ্রাসঙ্গিক করে তুলে । ট্রিগারিং (triggering)  ফ্যাক্টর হলো বেশ কিছু ঘটনা যেটা সাধারণ মানুষের চিন্তা ভাবনা কে প্রভাবিত করে এবং তাদের চিন্তাভাবনার গতিপথ পরিবর্তন করে। রাজ্য এবং দেশে সম্প্রতি এবং অতীতে বহু বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটে গেছে যার জন্য আমাদের লজ্জায় মাথা নিচু করতে হয়েছে এবং অতীতে করতে হয়েছিল। সেই সব নিয়ে আলোচনা করতে বসলে প্রচুর নোংরা ঘাটা হয়ে যাবে এক কথায় বলতে গেলে আজকের রাজনীতিক  প্রেক্ষাপটে কোনও রাজনৈতিক দল ধোয়া তুলসী পাতা নন। যদি আমরা ঘটনা গুলোর  কালপঞ্জি (Chronology) বর্তমান এবং অতীতে এর দিকে তাকাই তাহলে এই ট্রিগারিং ফ্যাক্টর গুলোর সব সময় তাৎক্ষণিক নয় বরং  দীর্ঘমেয়াদি ভোট বাক্সে তার প্রতিফলন রেখে যায়। আসলে ট্রিগারিং ফ্যাক্টর গুলোর একটা ধীর স্নোবলিং (snowballing) এফেক্ট রাজনীতিক দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস করে এবং সময়ের সাথে -সাথে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতা এবং নির্বাচনে ধারাবাহিক জয় লাভ হতে থাকায় এসব ঘটনাকে গুলোকে খুব একটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে না কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা হ্রাস পেতে শুরু করে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব হিসাবে রাজনৈতিক দেউলিয়া অবস্থায় পৌঁছায়। যেকোনো গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কাজ করতে গেলে প্রধান শক্তি হলো সাধারণ মানুষ এবং রাজনীতিক দল সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের উপলব্ধি এবং সেই রাজনীতিক দলের মানুষদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা। সাধারণ মানুষদের মধ্যে গ্রহণযোগ্য না হতে পারলে কর্মসূচী যত ভালোই হোক, তা সফল হতে পারে না। রাজ্য রাজনীতিতে প্রেক্ষাপট এবং পরিস্থিতি দুটোই দ্রুত পাল্টাচ্ছে । কিন্তু রাজনীতিক বিকল্প হিসেবে বামপন্থী বা ভারতীয় জনতা পার্টি উভয়ের  রাজ্য স্তরে সাধারণ মানুষদের মধ্যে কী গ্রহণযোগ্য রাজনীতিক দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন ?? বিগত নির্বাচন গুলোর ভোট শতাংশ তো বিপরীত বার্তা দিচ্ছে ??

                     2004 – 2019 সাল পর্যন্ত দমদম লোকসভায় ভোট শতাংশের কালপঞ্জি(Chronology)

2004- AITC- None, CPIM- 49.70%, BJP-41.90%, INC- 6.20% (বিজয়ী-CPIM)

2009- AITC- 47.04%, CPIM- 44.94%, BJP-5.70%, INC- N/A (বিজয়ী- AITC)

2014- AITC- 42.67%, CPIM- 28.99%, BJP-22.50%, INC- 3.01% (বিজয়ী-AITC)

2019- AITC-42.51%, CPIM- 13.91%, BJP- 38.11%, INC-2.42% (বিজয়ী-AITC)

ভোটের শতাংশের কালানুক্রমিক নিজেই দমদম লোকসভার প্রবণতা সম্পর্কে তথ্য বর্ণনা করছে। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কার্যত দমদম লোকসভার প্রেক্ষাপটে তাদের  রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলেছে এবং সিপিআই (এম ) ক্রমাগত ভাবে তার ভোটের শতাংশ হ্রাস করেছে।ভারতীয় জনতা পার্টি ২০০৯ ( 2009) সাল বাদে ক্রমাগত একটা ধারাবাহিক ভোট শেয়ার রাখতে সক্ষম হয়েছে। আমরা যদি সংখ্যাতাত্ত্বিক পারফরম্যান্সকে মাপকাঠি হিসাবে রাখি তবে সত্যিকারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তৃণমূল কংগ্রেস এবং ভারতীয় জনতা পার্টির মধ্যে। এই সংখ্যাতত্বে একটা কিন্তু ফ্যাক্টর কাজ করে ?? সংখ্যাসূচকগুলি অতীতের প্রবণতা বোঝার জন্য রেফারেন্স  হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তবে সাধারণ মানুষের উপলব্ধি বোঝার জন্য সর্বদা সঠিক ব্যারোমিটার নয়? যেহেতু রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ অনুযায়ী সাধারণ মানুষের ধারণা ক্রমাগত পরিবর্তিত হয় এবং রাজনীতিক অংকে সব সময়  দুই এবং দুই  চার হয়না এটি বাইশ ও হয়ে যেতে পারে।

                                         যে কারক গুলো  লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করবে

উপলব্ধ তথ্য অনুসারে ২০১৯ (2019) সালের লোকসভা নির্বাচনে পুরুষদের তুলনায় নারীরা বেশি ভোট দিয়েছিলো । আসন্ন দমদম লোকসভার নির্বাচনের ক্ষেত্রেও আশা করা যায় যে সেটা কোনো ব্যতিক্রম হবে না। দমদম লোকসভার প্রায় ১৫ লক্ষ ভোটারের মধ্যে ৪৯%(49%)মহিলা ভোটার। এই নির্বাচনের ফলাফল মহিলা ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকারী ফ্যাক্টর হতে চলেছে। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত, বাড়ির পুরুষই সিদ্ধান্ত নিতেন কীভাবে পরিবারের মহিলারা ভোট দেবেন। তবে এখন নারীরা অর্থনৈতিকভাবে অনেক বেশি স্বাধীন হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের এর নীতিগুলি অর্থনৈতিকভাবে মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। সুবিধাভোগী স্কিমগুলির মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর হল লক্ষ্মীর ভান্ডার, যা তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে একটি বৃহৎ, নিবেদিত মহিলা ভোটিং ব্লক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে  এবং এটি আসন্ন নির্বাচনে নির্ধারক ফ্যাক্টর হতে চলেছে।  প্রথম বারের ভোটার এবং তরুণ, শিক্ষিত, বেকার যুবকরাও এই নির্বাচনের ফলাফলকে প্রভাবিত করতে চলেছে, তবে তারা কিছুটা রাজ্য শাসক গোষ্ঠীর প্রতি হতাশ বলে মনে হয়েছে ?? ভোট বাক্সে এটার কিছুটা রাজ্য শাসক গোষ্ঠীর  বিপরীত প্রতিফলন পড়তে পারে।

   উপসংহার : নির্বাচন টা লোকসভার (Lower house of parliament) যেখানে দেশের নীতি নির্ধারণ করার দায়িত্ব বর্তায় নির্বাচিত সাংসদ সদস্যদের। সুতরাং দমদম লোকসভার সাংসদ হিসেবে দেখার দায়িত্ব কতখানি কেন্দ্রীয় প্রকল্প এই লোকসভার সাধারণ মানুষদের সুবিধার্তে নিয়ে আসা যায়। আমরা যদি দমদম লোকসভার সাংসদ চয়নের কালানুক্রম দেখি তাহলে সিপিআই (এম), ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ভারতীয় জনতা পার্টি এবং ক্রমাগত তিন বার তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ কে  দমদম লোকসভা চয়ন করে পাঠিয়েছে কিন্তু একটা বড়ো প্রশ্ন চিহ্ন থেকে যায় যে কটা কেন্দ্রীয় প্রকল্প এই সাংসদরা দমদম লোকসভার সাধারণ মানুষদের সুবিধার্তে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন??  দুঃখের বিষয় যে সমস্ত জ্বলন্ত সমস্যা গুলিকে (বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থানের জন্য ভারী শিল্প এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে সুপারস্পেশালিটি হাসপাতাল)। দমদম থেকে বারাসাত পর্যন্ত মেট্রোর মতো পরিকাঠামোর দ্রুত বাস্তবায়ন। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগকে ( Micro-small &medium enterprises)  যথাযথ আর্থিক ও কাঠামোগত সহায়তা) এই সমস্যাগুলোকে বস্তুনিষ্ঠভাবে সম্বোধন করার পরিবর্তে বেশিরভাগ রাজনৈতিক  প্রচার শুধু শব্দের মায়াজাল তৈরী তে ব্যস্ত। আমরা বিগত চার মাস ধরে দমদম লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধান সভার সাধারণ মানুষদের সাথে আমাদের লোকসভা নির্বাচনের  নিরিখে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। বর্তমানে, রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত স্টুডিওতে বসে রাজনৈতিক বিতর্ক দেখে-দেখে ক্লান্ত সাধারণ মানুষ। তাদের যা প্রয়োজন তা হল স্থল বাস্তবতার ভিত্তিতে জ্বলন্ত সমস্যাগুলির সমাধান করা। রাজনীতিতে কোনো কিছুই চিরস্থায়ী নয় হয়তো এই নির্বাচনে সাধারণ মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে জনাদেশ দিতে পারেন বা হয়তো আবার তৃণমূল কংগ্রেসের তিন বারের সাংসদ, সৌগত রায় কে পুনঃ নির্বাচিত করতে পারেন সেটা সাধারণ নির্বাচকরা ঠিক করবেন।

    সংবিধিবদ্ধ ঘোষণা : একটি নিরপেক্ষ নিউজ পোর্টাল হিসেবে  উপলব্ধ তথ্য ও পর্যালোচনার ভিত্তিতে এই সংবাদে বক্তব্য ও মন্তব্য দেওয়া হয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য কোনো রাজনৈতিক দল / সংগঠন / ব্যক্তি বিশেষের উপরে অপ্রয়োজনীয় বা ইচ্ছাকৃত মন্তব্য করা নয়। বা কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উপর আমাদের  মতামত চাপিয়ে দেওয়া । (হকীকত নিউজ www.haqiquatnews.com) একটি নিউজ পোর্টাল যারা সামাজিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন।

About the author

Nanda Dulal Bhatttacharyya

Nanda Dulal Bhatttacharyya

journalist by profession , have put good number of years in ground reporting

Add Comment

Click here to post a comment