Home » গঙ্গাচড়ার স্বপ্ন গ্রাস করছে সর্বনাশা তিস্তা

গঙ্গাচড়ার স্বপ্ন গ্রাস করছে সর্বনাশা তিস্তা

আমিনুল হক,  হাকীকত নিউজ, ঢাকা :   এযেন ভিন্ন রূপে তিস্তা। তিস্তাপারের বিস্তীর্ষ এলাকার মানুষ সাধারণ যে তিস্তাকে এতেদিন দেখে এসেছেন, বর্তমানের সঙ্গে তার কোন মিল নেই। এতটা দয়ামায়াহীন নিষ্ঠুর তিস্তাকেতো তারা দেখেননি। দুচোখেন জল গড়িয়ে তিস্তায় মিশে যাচ্ছে। তবুও থামছে না। একের পর এক বাড়িঘন, জমি গ্রাস করে চলেছে। ঘরদোর রক্ষা করতে তড়িঘড়ি ঘর ভেঙ্গে নৌকায় করে অন্যত্র চলে যাচ্ছে মানুষ। জনম জনমের ঠাঁই কেড়ে নিয়ে তিস্তা। জানা গেলো রংপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইচলি গ্রামের অনেক বাড়িঘর ও জমাজমি ইতিমধ্যে তিস্তা গিলে নিয়েছে। ঠাঁইহীন করে দিয়ে শ শ মানুষ। হায় রে তিস্তা—।  উত্তরের জনপদ রংপুর। তারই একটি উপজেলা গঙ্গাচড়া। অপেক্ষা নিম্ন আয়ের লোকজনই বেশি ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে এখানে দারিদ্র কমে গিয়ে অনেকেই সামলম্বি হয়ে ওঠেছেন। ছনের ঘরের জায়গায় ওঠেছে টিনের চালা। কিন্তু তিস্তা যেন মানুষের এই সুখ সইতে পারছে না। সে ফুসে উঠেছে। রণরূপে গ্রাস করে চলেছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র হচ্ছে। প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা ভাঙছে। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। ভাঙনকবলিত লোকজন ঘরবাড়ি ভেঙে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে ছুটে চলেছে। কেউ দূরে পাকা সড়কের পাশে সরকারি জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। কেউ কেউ এলাকা ছেড়ে সদর ইউনিয়নের গান্নারপার এলাকায় চলে যাচ্ছে। কেউ আরও দূরে চলে যাচ্ছে। গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারি ইউনিয়নের ইচলি গ্রামে তৃতীয় দফা বানের জলে  ভেসে যাবার পর যখন জল কমতে শুরু করেছে, যখন বানের দখল কাটিয়ে উঠতে নানা চিন্তা ভাবনা করছে, তখনই  তিস্তা ভাঙ্গনের মধ্যে মানুষ অবর্ণীয় দুর্দশায় পড়েন। জল উন্নয়ন বোর্ডের মতে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় এবার এলাকায় নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে। লক্ষ্মীটারি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ও স্থানীয় জনগণ সূত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে,   উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে এই ইচলি গ্রামে প্রায় ৬৫০ পরিবারের বাস ছিল। ২ বছর আগে বন্যা ও নদীভাঙনে এলাকার ৫০ পরিবার তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছেন অন্যত্র।  এর মধ্যে প্রায় ৬০০ পরিবার সেখানে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ বছর দফায় দফায় বানের জল এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তন দুয়ে মিলে এলাকা ভাঙতে শুরু হয়েছে। বানের নেমে যাবার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তীব্র হচ্ছে ভাঙন। ফলে একের পর এক আবাদি জমি ও বসতভিটা বিলিন হচ্ছে তিস্তার অথৈ জলে। অভাবী মানুষজন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। উপায়হীন মানুষ আশ্রয়ের খোঁজে অন্যত্র চলে গেছেন।  অনেকে আত্মীয়ের বাড়িতে অস্থায়ী আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের কেউ নেই তারা আশ্রয় নিয়েছেন পাকা রাস্তার ধারে।  যে কৃষক বছরান্তে গোলা ভরা ধান তুলতেন। তিস্তা তাদের নিঃশ^ করে দিয়েছে।  লক্ষ্মীটারি ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল হাদীর মতে,  তিস্তা নদীর উত্তর-পশ্চিমে শংকরদহ এলাকা থেকে ইচলি হয়ে পাশের কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা এলাকা পর্যন্ত গত বছর একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছিল এলাকাবাসী। কিন্তু জল উন্নয়ন বোর্ড বিষয়টি গুরুত্ব না দেয়নি। এবার নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকায় গ্রাস্ত করে নেয়।  জল উন্নয়ন বোর্ডের রংপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নদীভাঙন এলাকা তারা পরিদর্শন করেছেন। চীনের সহযোগিতায় নদীর গতিপথ পরিবর্তনরোধে কাজে হাত লাগাবেন তারা।