আমিনুল হক , হাকীকত নিউজ, ঢাকা: চোখের সামনে বানের জল কেড় নিয়েছে ১৪০ কোটি টাকার ফসল। এই চিত্র কেবল কুড়িগ্রাম জেলার। বানের জল নেমে যার সঙ্গে ভেসে ওঠছে নানা রকমের মরা গাছ। কৃষকের দীর্ঘ শ^াস বাতাস ভারী করে তোলে। সেই সঙ্গে সামনের দিনগুলোতে ফসল ফলানোর শক্তিও তাদের হারিয়ে গেছে। এবারের বন্যায় দীর্ঘদিন ঘর ছাড়া থাকতে হয়েছে তাদের। ঘর থেকে জল নেমে যাবার পর ফিরতে শুরু করেছেন বাড়ি ছাড়া মানুষের দল। ধীরে ধীরে ঘরদোর ঠিক করে বসতের উপযোগী করে নিচ্ছেন। দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় ফসল ঘরে তুলতে পারেননি। একারণে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকেরা। সরকারিভাবে পুনর্বাসন ও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারী সহায়তা চান বন্যাকবলিত কৃষকদের। এ অঞ্চরের বহু কৃষক বেসরকারিভাবে ঋণ নিয়ে বিভিন্ন ফসল ও সবজি চাষাবাদ করে থাকেন। দীর্ঘ বন্যায় তা নষ্ট গেছে। এ অবস্থায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রের খবর, দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এ জেলায় ১৭ হাজার ৫৫৬ হেক্টর আবাদি জমির ফসল সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়। এরমধ্যে নষ্ট হয়েছে ১১ হাজার ৬৬২ হেক্টর জমির ফসল। এতে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৫৮জন কৃষক ১৪০ কোটি ৬৭ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে পাট, আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসেব মতে পাটক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর, আউশ ধান ৪ হাজার ৪৩০ হেক্টর, আমন বীজতলা ১ হাজার ৭১ হেক্টর, শাকসবজি ৯৫৩ হেক্টর, তিল ৩০২ হেক্টর, মরিচ ২০৫ হেক্টর, চিনা ১৪০ হেক্টর, কাউন ২০ হেক্টর ও ভুট্টা ১৪ হেক্টর। কৃষি বিভাগ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে সহযোগিতার জন্য ১০৫ একর কমিউনিটি বীজতলা, শতাধিক ভাসমান বীজতলা ও ১১২টি ট্রে বীজতলা করে মাত্র ৭ হাজার ৬৭জন কৃষককে সহযোগিতা দেওয়া হবে। এছাড়াও ১ হাজার ২০০ বিঘা জমিতে মাসকালাই কার্যক্রমের মাধ্যমে ১ হাজার ২০০জন চাষি উপকৃত হবে। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান প্রধান সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমের দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে কৃষির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক। সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন। আমন বীজতলা ছাড়াও করোনাকালীন এবং বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ২৭ হাজার ৭৬১জন সবজি চাষিকে পর্যায়ক্রমে প্রণোদনার আওতায় আনা হচ্ছে।
Add Comment