Home » করোনা আবহে অনাড়ম্বর ভাবে নবদ্বীপ ও মায়াপুরে শুরু হল ঝুলনযাত্রা উৎসব

করোনা আবহে অনাড়ম্বর ভাবে নবদ্বীপ ও মায়াপুরে শুরু হল ঝুলনযাত্রা উৎসব

দিবাকর দাস, হকিকত নিউজ, নদিয়া: করোনা আবহে নবদ্বীপ ও মায়াপুরে শুরু হল পাঁচ দিন ব্যাপী রাধাকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উৎসব। এর আগের উৎসবগুলির মধ্যে রথযাত্রা থেকে বিপদতারিনী পুজো সহ একাধিক ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ ছিলো। এবার অনাড়ম্বরভাবেই ৩০শে জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হল রাধাকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উৎসব যা চলবে ৩ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত। করোনা আবহে একেবারে অনাড়ম্বরভাবেই উদযাপিত হচ্ছে বৈষ্ণবতীর্থ নদীয়ার নবদ্বীপের ঝুলন যাত্রা উৎসব, ঝুলন যাত্রা শুরু হলেও বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরে তেমন কোনও উদ্দীপনা অবশ্য নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। শুধুমাত্র নিয়ম রক্ষার তাগিদেই এবছর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঝুলন যাত্রা উৎসব। পাশাপাশি মন্দিরণগরী বলে খ্যাত মায়াপুর আন্তর্জাতিক ইসকন মন্দিরেও বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে রাধাকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উৎসব। নবদ্বীপের অন্যতম ধমেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দির, চৈতন্য জন্মস্থান মন্দির, সমাজবাড়ি, বলদেব জিউ মন্দির,মদনমোহন মন্দির, শ্যামসুন্দর মন্দির ইত্যাদি মন্দিরগুলোতে ঝুলন উৎসব শুরু হলেও তেমন কোনও জাঁকজমক নেই বললেই চলে। ঝুলন যাত্রা উপলক্ষে চৈতন্যভূমি নবদ্বীপের একাধিক মন্দিরের সিংহাসনে ঝুলানো হয়েছে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ, বিগ্রহের চারিদিকে রয়েছে একাধিক গোপিনী। তবুও অনাড়াম্বরতার মধ্যে চিরাচরিত ভাবে রামায়ণ, মহাভারত সহ বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী অবলম্বনে ছোট বড় পুতুলের মাধ্যমে সাজিয়ে তোলা হয়েছে এক একটি মন্দির প্রাঙ্গণ। অন্যদিকে ধামেশ্বর শ্রীমন ধমেশ্বর গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরে প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়েছে ঝুলন যাত্রা উৎসব। এখানে পনেরদিন ধরে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে রুপোর সিংহাসনে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ধামেস্বর গৌরাঙ্গ মন্দিরে ঝুলনের প্রধানতম কেন্দ্রবিন্দু শ্রীমন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু। তাই তাকেই সিংহাসনে বসিয়ে ঝুলন যাত্রা উৎসব উদযাপন করেন ভক্তরা। অন্যান্য বছরে এই উৎসবকে সর্বাঙ্গীন করে তুলতে দিনভর মন্দিরে চলত বিশেষ পুজোপাঠ ও নামসংকীর্তন। করোনা আবহে এবার সেই সব কিছুই হচ্ছে না। সমস্ত প্রথাই কাটছাট করা হয়েছে। শুধু নিয়ম রক্ষার তাগিতে উদযাপিত হচ্ছে ঝুলন যাত্রা উৎসব। ধমেশ্বর শ্রীমন গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর মন্দিরে ঝুলন উৎসবে রাধাকৃষ্ণ নন, এখানে মূলত গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে ঝুলনে ঝোলানো হয়। শোনা যায় গৌরাঙ্গ মহাপ্রভু সেবাপূজা করতেন তার সহধর্মিনী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী। কথিত আছে সেবাপুজা চলাকালীন নিম বৃক্ষের তৈরি গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর দারু মূর্তিতেই বিলীন হয়ে যান বিষ্ণুপ্রিয়া দেবী। সে কারণেই গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে রীতি অনুযায়ী পড়ানো হয় শাড়ি। এছাড়াও প্রতিদিন মহাপ্রভুর নাকে পড়ানো হয় নোলক। বিষ্ণুপ্রিয়া সেবা সমিতির অন্যতম সম্পাদক জয়ন্ত কুমার গোস্বামী জানান, “এবছর করোনা আবহে কোনও রকম ভাবে উদযাপিত হচ্ছে এই উৎসব। প্রতিদিন দর্শনে আসা ভক্তদের সামাজিক দূরত্ববিধি এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে মন্দিরে প্রবেশ করানো হবে। ঝুলনের এই পাঁচদিন রীতি ও রেওয়াজ মেনে গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে বিভিন্ন পোশাক পড়ানো হয়। প্রথম দিন পড়ানো হয় নটোবর, দ্বিতীয় দিন রাজনটবর, তৃতীয় দিনে থাকে রাখালবেশ,চতুর্থ দিন রাধারানী অর্থাৎ নগরী এবং পঞ্চম দিন অর্থাৎ শেষ দিনে থাকে রাজবেশ। পাশাপাশি মন্দিরণগরী মায়াপুর ইসকন চন্দ্রোদয় মন্দিরেও শুরু হয়েছে রাধাকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উৎসব। ইতিমধ্যে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে চন্দ্রোদয় মন্দিরকে ফুল ও আলোক মালায় সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মন্দির প্রাঙ্গণে অহরহ চলছে নাম সংকীর্তন। নবদ্বীপ থানা প্রাঙ্গণে রয়েছে রাধাকৃষ্ণের মন্দির। সেই মন্দিরেও উদযাপিত হচ্ছে ঝুলন উৎসব। প্রতিবছর চৈতন্যভূমিতে ঝুলন উৎসব দেখতে ভিড় জমান দেশ ও বিদেশের অসংখ্য সাধারণ মানুষ। এবছর করোনা আবহে দেশি ও বিদেশি ভক্ত ছাড়াই মায়াপুর ও নবদ্বীপে শুরু হল রাধাকৃষ্ণের ঝুলন যাত্রা উৎসব।