Home » কলকাতা থেকে চিলাহাটি হলদীবাড়ি হয়ে ট্রেন যাবে দার্জিলিং শিলিগুড়ি

কলকাতা থেকে চিলাহাটি হলদীবাড়ি হয়ে ট্রেন যাবে দার্জিলিং শিলিগুড়ি

আমিনুল হক,  হাকীকত নিউজ, ঢাকা : দার্জিলিং মেইলের কথা নিশ্চয়ই স্মরণ আছে। তাও বছর ৬৫ আগে। পাক-ভারত যুদ্ধের পর রুদ্ধ হয়ে যায় এপথে ট্রেনের চলাচল। সেই ভাঙ্গলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার উদ্যোগেই ৬৫ বছর পর ফের চালু হতে যাচ্ছে বাংলাদেশের চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলসংযোগ। ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশ পালন স্বাধীনতার ৫০ বছর। সেই দিনই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রেলপথের উদ্বোধন করবেন। এর পর কলকাতা থেকে ট্রেন ছেড়ে দর্শনা হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে চিলাহাটি হযে হলদিবাড়ি হয়ে ট্রেন দার্জিলিং শিলিগুড়িতে। সেই মহেন্দক্ষণটির জন্য প্রস্তু বাংলাদেশ। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি  রেলপথ চালু হচ্ছে, খুশীতে এখন আত্মহারা উত্তরের নীলফামারী জেলার মানুষজন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই পথে ভারতের সঙ্গে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু হলে এলাকার অর্থনৈতিক চিত্র পাল্টে যাবে। পাশাপাশি দুই বাংলার সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন ঘটবে। ইতিহাস বলছে, ১৪৯ বছর আগে আজকের বাংলদেশের নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের শুরুটা ছিল আসাম-বেঙ্গল রেলওয়েকে ঘিরে। পলাশীর যুদ্ধে বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার শেষ স্বাধীন নবাবসিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার পর ব্রিটিশরা এ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে স¤পদ আহরণের জন্য নির্মাণ করতে থাকে রেলপথ। আর সেই রেলপথগুলো পুরো ভারত উপমহাদেশকে একসঙ্গে বেঁধেছিল। সেই সময়ে ১৮৭০ সালে ইংরেজ বেনিয়ারা সৈয়দপুরে প্রতিষ্ঠা করে বিশাল রেলওয়ে কারখানা। যা আজো বাংলাদেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা হিসেবে পরিচিত। আসাম-বেঙ্গল রেলপথকে ঘিরে ততকালীন ব্রিটিশ সরকার ১১০ একর জায়গার ওপর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করেছিল। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট ভারত ভাগের পরও তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে চিলাহাটি-হলদিবাড়ি মধ্যে এই ইন্টারচেঞ্জ চালু ছিল। সে সময় চিলাহাটি ও হলদিবাড়ি স্টেশনের উজ্জ্বল ইতিহাস স্মরণ করে এখনও অনেক প্রবীণরা গর্ববোধ করেন।  ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত হলদিবাড়ির সঙ্গে তদানীন্তর পাকিস্তানের রেল যোগাযোগ ছিল। ১৯৪৭ সালের ভারতের স্বাধীনতার আগে হলদিবাড়ি-চিলাহাটি দিয়ে সরাসরি কলকাতার যোগাযোগ ছিল। দার্জিলিং মেল ট্রেনটি তখন এই পথে দর্শনা হয়ে যাতায়াত করতো। সেই সময় চিলাহাটি-হলদিবাড়ির কদর ছিলো অনেক বেশি ছিল। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর তাও বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর নতুন করে রেলপথটি চালুর উদ্যোগ নেন। ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এই পরিত্যক্ত রেলপথটি পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ৮ মে থেকে সপ্তাহ ব্যাপী বাংলাদেশের অংশের এবং ২০১৭ সালের গোড়ার দিকে ভারতের অংশের জরিপ কাজ শেষ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশ্বাসে দীর্ঘ ৫ দশক বন্ধ থাকা  চিলাহাটি-হলদিবাড়ির পরিত্যক্ত রেলপথ পুনরায় স্থাপন প্রায় সম্পন্ন এবং রেলযোগাযোগের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে উভয় তরফে। উল্লেখ যে বাংলাদেশের অংশের কাজ শুরু হলেও অপরদিকে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দকৃত ৩১ কোটি রুপি দিয়ে ভারতের হলদীবাড়ি অংশে ৪ দশমিক ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের কাজ ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর শুরু করা হয়। যা ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ সমাপ্ত করা হয়। ভারতের অংশের স্থাপিত রেললাইনে বাংলাদেশের চিলাহাটি ডাঙাপাড়া সীমান্ত বিপি ৭৮২/২ এস নম্বর পিলার পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেলের ইঞ্জিন চালানো হয়। সেদিন ইঞ্জিন যাত্রার সূচনা করেছিলেন, ভারতের এনজেপির ডেপুটি চিপ ইঞ্জিনিয়ার (নির্মান) রামকুমার বাদল। এখন চলছে ভারতের হলদীবাড়ি রেলস্টেশনটিকে আন্তর্জাতিক মানের নির্মাণের কাজ। রেলওয়ে সুত্রের খবর, বর্তমানে খুলনার মংলা, ঢাকা ও রাজশাহী থেকে সরাসরি ব্রডগেজের রেলপথ চালু রয়েছে নীলফামারী চিলাহাটি সীমান্তের স্টেশন পর্যন্ত। কাজ সম্পন্ন হলে ভারতের হলদীবাড়ি হয়ে জলপাইগুড়ি নিউ জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি সাথে ফের সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে।