আমিনুল হক, হাকীকত নিউজ, ঢাকা : ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসামের করিমগঞ্জ, বদরপুর, সূতারকান্দি, ধুবড়ি, শিলঘাট ও পান্ডুর পর এবারে জলপথ চালু হতে যাচ্ছে, ত্রিপুরার সোনামুড়ায়। এছাড়াও বাংলাদেশ-ভারতের চুক্তি অনুযায়ী চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করে টায়াল রান সম্পন্ন হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে নিয়ম মাফিক সড়কপথ ব্যবহার করে পণ্যবাহী ট্রেইলর পৌছে ত্রিপুরার আগরতলা এবং আসামে। এবারে সড়ক পথ নয়। সাশ্রয়ী ও সম্ভাবনাময় জলপথ ব্যবহার করে পণ্যযাবে ত্রিপুরার সোনামুড়া নৌবন্দরে। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেও আগামী সপ্তাহে গোমতীর বুক চিড়ি সিমেন্টবাহী একটি কার্গো এসে নোঙর করবে সোনামুড়া নৌবন্দরে। বাংলাদেশের প্রিমিয়ার সিমেন্ট কোম্পানি তাদের নিজস্ব কার্গোতে পণ্য নিয়ে সোনামুড়া যাবে। তাতে করে খুলে যাবে পূর্বাঞ্চলের অর্থনীতির দুয়ার। সেই সঙ্গে গোমতীর বুকে উড়বে উন্নয়নের শংকচিল। ত্রিপুরার সঙ্গে নতুন এই নৌরুটি অত্যন্ত গুরুপূর্ণ ও সম্ভবনাময়। এই নৌরুট চালুর মধ্য দিয়ে পণ্যপবিহনে সময় ও অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে। ত্রিপুরার পরই পণ্য আসবে শিলচর, করিমগঞ্জ আর বদরপুরে। জলপথ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অথরিটির (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের নেতৃত্বে ১১ আগস্ট একটি প্রতিনিধি দল বিবির বাজার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত ৯১ কিলোমিটার নৌরুট পরিদর্শন করেছেন। এই পরিদর্শনের পরই অপেক্ষাকৃত ছোট কার্গো দিয়ে একটি ট্রায়াল রানের প্রস্তুতির নিওয়া হচ্ছে। সেই প্রস্থুতির অংশ হিসেবেই আগামী সপ্তাহে প্রিমিয়ার সিমেন্টের নিজস্ব ভেসেলে দাউদকান্দি হয়ে সোনামুড়া নৌবন্দরে ট্রায়াল রান সম্পন্ন হবে। বিআইডব্লিটিএ’র পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তারা অতি সম্প্রতি গোমতীনদী পরিদর্শন করেছেন। তাদের অনুমান, সোনামুড়া প্রান্ত থেকে জল আসার কিছুটা প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে। জলপ্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থার ওপর জোড় দিলেয়েছেন তিনি। বাংলাদেশের অধিকাংশ সিমেন্ট ফ্যাক্টরী মেঘনা নদীর
তীরে। নারায়ণগঞ্জের লাগোয়া মোক্তারপুর থেকে ২০টন সিমেন্ট নিয়ে মেঘনা ও দাউকান্দি ব্রীজ ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকায় নরসিংদী, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং কুমিল্লাহ হয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম বিবিরবাজার স্থল বন্দরে পৌঁছাতে হয়। এতে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। এমন তথ্য জানিয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ স্থানীয় সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার সিমেন্টের চিফ অপারেটিং অফিসার তারিক কামাল বলেন, মুন্সিগঞ্জ-নারায়নগঞ্জ থেকে জলপথে দাউদকান্দি হয়ে সোনামুড়া পর্যন্ত যেখানে ১২৭ কিলোমিটার, সেখানে সড়কপথে প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এই বিশাল পথ ঘুরে যাবার কারণে আমাদের পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। জলপথ পণ্যপরিবহণে উভয় দেশই লাভবান হবে। আরও একটি বড় বিষয় হচ্ছে, এই ত্রিপুরা থেকে কিন্তু পাশ^বর্তী রাজ্যগুলোতেও পণ্য যাবে। প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে অনুরোধ আসছে সিমেন্ট পাঠানোর জন্য। কিন্তু পরিবহন ব্যয়ের কারণে আমাদের পণ্য সরবরাহে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তারিক কামাল আরও বলেন, ত্রিপুরার প্রতি বাংলাদেশের মানুষের আলাদা একটা টান রয়েছে। সেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়েই আমাদের নিজস্ব ভেসেলে গোমতী নদী পরিদর্শনের ব্যবস্থা করিয়েছি। ত্রিপুরার তিন দিকে বাংলাদেশ। পাঁজরঘেষা এই রাজ্যটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রায় ১৫ লাখের অধিক মানুষকে আশ্রয় দিয়েছে। পাশাপাশি আসামের শিলচর, করিমগঞ্জ এলাকার অবস্থা একই। এসব অঞ্চলের মানুষের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা চাই যতটা সম্ভব স্বল্পমূল্যে দ্রুততম সময়ে এসব এলাকাগুলোয় পণ্য পৌছে দিতে। জলপথ চালু হলে ত্রিপুরা পাশ^বর্তী রাজ্যগুলো সাশ্রয়ীমূল্যে পণ্য পাবে। তারিক কামাল জানালেন, তাদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মাত্র ৬০ মেট্রিক টনের একটি ছোট পণ্যবাহী কার্গো জলপথে সোনামুড়া পৌছালে প্রতি ট্রিপে সাশ্রয় হবে প্রায় ১৮ হাজার টাকা। আর জলপথটি খননের পর যদি ২০০ মেট্রিক টন পণ্যও পরিবাহীত হয়, তাহলে প্রতিট্রিপে সাশ্রয় হবে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। যার সুবিধা ভোগ করবেন ত্রিপুরা এবং পাশ^বর্তী রাজ্যের আমজনতা। পাশাপাশি সাশ্রয় ও সময় দুটোই নেমে আসবে অর্ধেকে।
Add Comment